বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ৩৮ টাকা বাড়িয়ে ১৯৮ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার। এই দাম শনিবার (৭ মে) থেকে কার্যকর হয়েছে।
তবে কোথাও কোথাও খুচরায় প্রতি লিটার ২০০ টাকার বেশি বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ ক্রেতাদের। এই অত্যাবশকীয় নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে সব থেকে বেশি বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ।
দফায় দফায় দাম বাড়ায় ক্রেতাদের নাগালের বাইরে চলে গেছে পণ্যটি। লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধিতে বেকায়দায় পড়েছেন মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষ।
বিশেষ করে দিন আনা দিন খাওয়া মানুষগুলোর জীবনে পড়েছে হতাশার ছাপ। যেন সংসার চালানো দায় হয়ে পড়েছে।
শনিবার (৭ মে) নগরীর নিম্ন আয়ের মানুষ সয়াবিন তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে হতাশা প্রকাশ করেন। তাদের মধ্যে একজন রিকশাচালক শিপন আলী।
সপরিবারে আগারগাঁও কুমিল্লা বস্তিতে বসবাস করেন তিনি। মাসে ছয় লিটার তেল লাগে তার। সয়াবিন তেলের কারণে এখন মাসে বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে।
ফলে ছয় লিটারের পরিবর্তে তিন লিটার তেল দিয়ে সংসার চালান বলে দাবি করেন শিপন আলী।
তিনি বলেন, ‘ত্যালের দাম যেভাবে বাড়তেছে এখন পানি দিয়ে খাইতে হবে। এছাড়া কোনো উপায় নাই। দিন যাইতেছে ত্যালের দাম বাড়তেছে।
ত্যালের দাম একটু কমালেই ভালো হয়। আগে মাসে পাঁচ থেকে ছয় লিটার যাইতো এখন দুই থেকে তিন লিটার কিনতে কষ্ট হয়। এতা দাম দিয়া ত্যাল খাওয়া সম্ভব না।
গরিব মানুষ কোনো রকম খাইয়া বাঁচন লাগবো। দাম বেশি তাই ত্যাল খাওয়া কমাই দিছি।’
আরেক রিকশাচালক আবদুল খালেক। তিনিও কুমিল্লা বস্তিতে বসবাস করেন। আবদুল খালেক বলেন, ‘আগে ডেইলি আধপোয়া তেল খাইতাম। এখন আধপোয়ার জায়গায় এক ছটাক সয়াবিন খাই।’
আরেক রিকশাচালক মোহাম্মদ রিয়াজ। সপরিবারে নগরীর শেওড়াপাড়া ইকবাল রোডে বসবাস করেন। মাসে আয় ২০ হাজার টাকা।
এর মধ্যে বাসাভাড়া ৫ হাজার, রিকশার জমা ৩ হাজার এবং নাস্তাবাবদ মাসে আরও তিন হাজার টাকা খরচ হয়। ফলে মাসে টাকা থাকে ১১ হাজার টাকা।
এই টাকা দিয়ে পাঁচজনের সংসার চালাতে গিয়ে এমনিতেই বিপাকে পড়েছেন তিনি। ফলে সয়াবিন তেলের মূল্যবৃদ্ধি তার জন্য মরার ওপর খাঁড়ার ঘা।
রিয়াজ বলেন, ‘তরকারি, আলুর ভর্তা, ডাল সবখানেই তেল লাগে। তেল ছাড়া চলা যায় না। দাম কমলে আমাদের জন্য একটু ভালো হয়।’
সয়াবিন তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিপাকে পড়েছেন ছোট ছোট হোটেল ব্যবসায়ীরাও। তাদের দাবি, তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে ব্যবসায় লাভ হচ্ছে না। লাভের অংশ সয়াবিন তেলের বাড়তি দাম মেটাতেই ফুরিয়ে যায়।
আগারগাঁওয়ের ছোট হোটেল ব্যবসায়ী মনি বেগম বলেন, ‘ফুটপাতে ছোট হোটেল। প্রতিদিন ১৫ লিটার সয়াবিন তেল লাগে। লাভের টাকা সয়াবিন তেল কিনতেই চলে যায়।’
কেউ কেউ সয়াবিন তেলের মূল্যবৃদ্ধির জন্য ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটকে দায়ী করছেন। এসব ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি অনুরোধ করেছেন অনেকে।
তাদের মধ্যে একজন রিকশাচালক লিহা মিয়া। তার সংসারে মোট সদস্য আটজন। ফলে তেলের চাহিদাও বেশি।
লিহা মিয়া বলেন, ‘আমরা কী করুম। আমরা কইলে কাম হইবো। বইলা লাভ কী? আমাদের কথার কোনো দাম আছে।
২০০ টাকা দিলে ত্যাল ভর্তি, কম দিলে কই ত্যাল নাই। কোনো দোকানে ত্যালের অভাব আছে? অভাব নাই। সবখানে ত্যাল আছে, সব দোকানের গোডাউন ত্যালে ভর্তি।’