দুই বছর আগে মা মারা গেছেন। এক দিন আগে খুন হয়েছেন বাবা। কী হবে এতিম পাঁচ শিশুর? দুনিয়াতে স্বজন ছাড়া আপন রইলো না কেউ।
দুই বছর বয়সী শিশু আছিয়া। এখনো শেখেনি কথা। হারানোর ব্যথা, মা-বাবা না থাকা কিছুই বুঝতে পারছে না অবুঝ শিশুটি। শোকের মাতম বইছে বাড়িতে। ফুফু রহিমা বেগমের কোলে বসে অবুঝ আছিয়া শুধু এদিক ওদিক তাকাচ্ছে।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, আছিয়ার জন্মের পরই মারা যান মা অমিতা বেগম। সেই থেকেই আছিয়াকে লালন পালন করছেন ফুফু রহিমা বেগম। শুধুমাত্র আছিয়াই নয় বাবা-মা হারিয়ে এতিম হয়ে গেলো ওরা ৫ শিশু। আছিয়া সবার ছোট।
আছিয়ার বড় ভাই আজিজুল (১৪) গোহাইলবাড়ি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র, মেঝো ভাই রিয়াজুল (১২) ৫ম শ্রেণির ছাত্র, মুস্তাকিন (১০) ৪র্থ শ্রেণির ছাত্র ও মমিন (৮) ব্র্যাকের শিশু শ্রেণিতে পড়ালেখা করে।
জন্মের সময় মাকে হারায় আছিয়া। এবার প্রতিপক্ষের লোকজন নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করলো আছিয়ার বাবা আকিদুল মোল্যাকে। আছিয়া বাবা-মা বলে ডাকতেও পারলো না, আর কোনোদিন ডাকতে পারবেও না।
এলাকাবাসী জানান, আকিদুল ইসলাম মোল্যা গোহাইলবাড়ি বাজারে পাট ও ভুষি মালের ব্যবসা করতেন। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ঈদের দিন
মঙ্গলবার (৩ মে) দুপুরে ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার ঘোষপুর ইউনিয়নের চরদৈত্বেরকাঠি গ্রামের বাসিন্দা আকিদুল মোল্যাকে (৩৩) গোহাইলবাড়ি বাজারের পাশে কুপিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষের লোকজন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িতে বইছে শোকের মাতম। নিহত আকিদুলের বৃদ্ধা মা বাকরুদ্ধ। আকিদুলের ৪ ছেলের কান্নাকাটিতে পরিবেশ ভারি হয়ে উঠেছে। কান্নাকাটি করছে পাড়া-প্রতিবেশী ও আশপাশের মানুষ।
আকিদুল মোল্যার বড় ছেলে দশম শ্রেণির ছাত্র আজিজুল মোল্যা জাগো নিউজকে বলেন, আমার বাবা ঈদের নামাজ পড়ে বাড়িতে আসেন।
খাওয়া-দাওয়া করে দুপুরে বাড়ি থেকে দোকানের উদ্দেশে যান। গোহাইলবাড়ি বাজারে হামলা করে
আমার বাবাকে কুপিয়ে মেরে ফেলেছে। আমরা এতিম হয়ে গেলাম। আমাদের আর দেখাশুনার কেউ থাকলো না। আমি আমার বাবা হত্যার বিচার চাই।
নিহত আকিদুল মোল্যার ছোট ভাই দবির মোল্যা জাগো নিউজকে বলেন, আমার ভাই সরল, সহজ ও নিরীহ মানুষ ছিল। তার সঙ্গে কারো কোনো ঝামেলা নেই।
গ্রাম্য দলাদলিতেও যুক্ত নেই। ওরা আমার ভাইকে নির্মমভাবে হত্যা করলো।
আকিদুল মোল্যার বোন রহিমা বেগম জাগো নিউজকে বলেন, বড় ভাইয়ের স্ত্রী মারা যাওয়ার পর তার মেয়ে আছিয়াকে আমিই পেলেপুষে রাখছি। পাঁচটি শিশু এতিম হলে গেলো। কী হবে ওদের?
তিনি অভিযোগ করে বলেন, প্রতিবেশী, স্বজনদের সান্ত্বনা ছাড়া কারো কোনো সাহায্য সহযোগিতা পাচ্ছি না।
আরেক নিহত খায়রুল শেখ। তিনি ছিলেন একজন কৃষক। তার বাড়িও একই গ্রামে। তার স্ত্রী এক ছেলে ও এক মেয়ের ছোট একটি সংসার।
অভাবি হলেও সংসারে সুখ ছিলো। ছেলে ইয়াসিন হোসেন (১৫) পড়ে নবম শ্রেণিতে। আর মেয়ে রাবেয়া খাতুনের বছর দুই আগে বিয়ে হয়ে গেছে।
খুন হওয়া খায়রুল শেখের স্ত্রী নাছিমা বেগম জাগো নিউজকে বলেন, স্বামী হারিয়ে আমি বিধবা হলে গেলাম। শোক, কষ্ট ব্যথায় পাথর হয়ে গেছি। স্বামী হারিয়ে পাগলপ্রায়।
নাছিমা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ঈদের দিন দুপুরে আমার মেয়ে শ্বশুরবাড়ি থেকে আমাদের বাড়িতে আসছিল,
মেয়েকে এগিয়ে আনতে বাড়ি থেকে বের হয়ে গোহাইলবাড়ি বাজারের কাছে যাওয়া মাত্রই আরিফুজ্জামানের লোকজন আমার স্বামীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে।
আমার স্বামী একমাত্র উপার্জনক্ষম ছিলেন, আমার সংসার শেষ হয়ে গেলো। আমাদের এখন কী হবে? কীভাবে বাঁচবো। আমি স্বামী হত্যার বিচার চাই।
এদিকে বাবার ছবি নিয়ে মেয়ে রাবেয়া ও ছেলে ইয়াসিনের বুকফাটা কান্না আর আহাজারিতে আকাশ বাতাস ও পরিবেশ ভারি হয়ে উঠেছে। নির্মম জোড়া খুনের ঘটনায় পুরো এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
এ বিষয়ে বোয়ালমারী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মামুন ইসলাম জাগো নিউজকে জানান, অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
গোহাইলবাড়ি বাজার ও চরদৈত্বেরকাঠি গ্রামে ফরিদপুর জেলা পুলিশ ও থানা পুলিশের সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে এলাকার পরিবেশ এখন শান্ত রয়েছে।
এ বিষয়ে বোয়ালমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল আলম জাগো নিউজকে বলেন,
ঈদের দিন দুপুরে প্রতিপক্ষের লোকজন আকিদুল ও খায়রুল নামে দুই ব্যক্তিকে কুপিয়ে হত্যা করে। এলাকায় ডিবি পুলিশ ও অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এখনও থানায় এজাহার জমা পড়েনি। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন।
মঙ্গলবার (৩ মে) ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার ঘোষপুর ইউনিয়নে প্রতিপক্ষের অতর্কিত হামলায় ২ ব্যক্তি নিহত হন। এই ঘটনায় অন্তত ২০ জন আহত হন।