‘সন্তান ছাড়া কি মায়ের কোনোদিন ঈদ হয়? ছেলেকে ছাড়া ক্যামনে ঈদ করবো?’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে এ আক্ষেপ নাহিদ হাসানের মা নার্গিস বেগমের।
ছেলে গত ১৮ এপ্রিল রাতে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী ও কর্মচারীদের সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন।
ঈদের প্রাক্কালে কেমন আছে তার পরিবার? তা জানতে জাগো নিউজ হাজির হয় নাহিদের কামরাঙ্গীরচরের বাসায়।
এসময় শোক-দুঃখের কথা জানান নার্গিস আক্তার। পাশেই ছিলেন পুত্রবধূ ডালিয়া আক্তার।
নার্গিস বেগম বলেন, ‘সন্তান ছাড়া কি মায়ের কোনোদিন ঈদ হয়? হয় না। ছেলে মারা
গেছে মাত্র কয়েকদিন আগে। সেই ক্ষত আজীবন থাকবে। ছেলেকে ছাড়া মা ক্যামনে ঈদ করবে?’
অবশ্য অনেকেই আর্থিক সাহায্য-সহযোগিতা নিয়ে শোকাহত এ পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন। সে কথা জানিয়ে নার্গিস বেগম বলেন,
বসুন্ধরা গ্রুপ ১০ লাখ টাকার চেক দিয়েছে, ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে সেলাই মেশিন দেওয়া হয়েছে।
মগবাজার ব্যবসায়ী সমিতি ও বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির নেতা হেলাল সাহেব বলেছেন, আমাদের একটা ছোট পিকআপ ভ্যানের ব্যবস্থা করে দেবেন।
এছাড়া ঢাকা-২ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম এক লাখ টাকা দিয়েছেন।
নার্গিসের পাশে থাকা পুত্রবধূ ডালিয়া স্বামীর শোক ভুলতেই পারছেন না। তিনি এখনো যেন ভাবতে পারছেন না, নাহিদ আর নেই।
ডালিয়ার বাড়ি টাঙ্গাইলে। তার মা-বাবা সেখানেই থাকেন। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করা ডালিয়া থাকতেন কামরাঙ্গীরচরের কামরুল ইসলাম কমিউনিটি সেন্টারের গলিতে নানির বাসায়।
এখানেই নাহিদের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয় তার। সম্পর্কটি চিরস্থায়ী করতে ছয়মাস আগে তারা বিয়ে করেন। সুখেই কাটছিল যুগলবন্দি দিন।
ভালোবাসার প্রকাশে কয়েকদিন আগেই বাঁ হাতের তালুতে মেহেদি রঙে লিখেছিলেন, ‘আই লাভ ইউ নাহিদ’।
বিয়ের পর এটিই ডালিয়ার প্রথম ঈদ। স্বামীর সঙ্গে ঈদ করবেন বলে অজস্র স্বপ্ন সাজিয়েছিলেন। কিন্তু নাহিদের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে যেন মুছে গেছে ডালিয়ার সেসব স্বপ্নও।
তিনি জানান, ঘটনার দিন (১৯ এপ্রিল) নাহিদ বাসা থেকে বের হওয়ার সময় স্ত্রীকে বলেছিলেন, বাসায় ফিরে কামরাঙ্গীরচর রনি মার্কেট
থেকে ঈদের কেনাকাটা করবেন। ঈদের পরের দিন ডালিয়ার বাবার বাড়ি টাঙ্গাইলেও যাওয়ার কথা ছিল একসঙ্গে। তবে সন্ধ্যায় খবর পেলেন,
স্বামী আছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ)। সেখান থেকে আর ফেরা হলো না।