অবৈধ সম্পদ অর্জন ও তথ্য গোপনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় বিচারিক আদালতের পর হাইকোর্টের রায়ে ১০ বছরের
কারাদণ্ড বহাল থাকায় উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুসরণ করে ঈদুল ফিতরের পর আত্মসমর্পণ করবেন আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য (এমপি) হাজী মোহাম্মদ সেলিম।
উচ্চ আদালতে দণ্ড বহাল থাকায় হাজী সেলিমকে কারাগারে যেতে হবে। কারাগারে না গিয়ে তার জামিন পাওয়ার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
সোমবার (২৫ এপ্রিল) রায়ের নথি হাতে পাওয়ার পর হাজী সেলিমের আইনজীবী সিনিয়র অ্যাডভোকেট সাঈদ আহমেদ রাজা বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন।
অ্যাডভোকেট সাঈদ আহমেদ রাজা বলেন, কারাগার থেকে হাজী সেলিম এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন। সেই সঙ্গে জামিন আবেদনও করবেন।
তবে সেটা উচ্চ আদালত থেকে পাঠানো নথি পর্যালোচনা করে সব ঠিক থাকলে বিচারিক (নিম্ন) আদালতে জমা দেওয়া হবে।
পর্যালোচনার পর দিনক্ষণ ঠিক করে নিয়ম অনুযায়ী আত্মসমর্পণের পাশাপাশি জামিন আবেদন করবেন তিনি।
তিনি বলেন, অফিসিয়ালি রায়টা আজ কমিউনিকেট হয়েছে। এটা এখন বিচারিক আদালতে যাবে। আমাদের ৩০ দিন টাইম দেওয়া হয়েছে। এ ৩০ দিনের মধ্যে কিছু সরকারি ছুটি আছে, সেগুলো ক্যালকুলেট করে।
আমরা বিচারিক আদালতে সারেন্ডার (আত্মসমর্পণ) পিটিশন দেবো। ৩০ দিনের মধ্যে এটা আমরা দেবো। আমি আমার ক্লায়েন্ট (মক্কেল) সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিম সাহেবের সঙ্গে কথা বলেছি।
তিনি সবকিছু দেখে ঈদের পরই আত্মসমর্পণ করবেন।১০ বছরের কনভিকশন বহাল থাকায় আত্মসমর্পণ করার পর কারাগারে যেতে (হাজী সেলিমকে) হবে।
এরপর সার্টিফায়েড অনুলিপি ও ওকালতনামা নিয়ে আপিল বিভাগে নিয়মিত আপিল করবো। সেই সঙ্গে জামিনের দরখাস্ত করবো।
যেহেতু হাজী সেলিম বর্তমান সংসদ সদস্য, আশা করি আত্মসমর্পণের পর কারাগারে গেলেও তিনি জেলকোডের নিয়ম অনুযায়ী সব সুবিধা পাবেন।
এর আগে হাজী সেলিমের ১০ বছর কারাদণ্ডাদেশ বহাল রেখে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বিচারিক আদালতে পাঠানো হয়।
রায়ের নথি সোমবার বিকেল ৩টার দিকে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৭ এর বিচারক শহিদুল ইসলামের আদালতে পৌঁছায়।
আদালতের সংশ্লিষ্ট শাখা মামলার নথিটি গ্রহণ করেন। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত ৭ এর স্টেনোগ্রাফার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে রায়ের নথি পাঠানো হয় জানিয়েছে সোমবার সকালে দুদকের আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান বলেন,
আইন অনুযায়ী আজকের দিন থেকে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে হাজী সেলিমকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতে হবে। হাইকোর্টের রায়ের ফলে তার সংসদ সদস্য পদে থাকার যোগ্যতা নেই।
এর আগে হাজী সেলিমকে বিচারিক (নিম্ন) আদালতে দেওয়া ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং ১০ লাখ টাকা জরিমানার রায় বহাল রাখেন হাইকোর্ট।
২০২১ সালের ৯ মার্চ বিচারপতি মো. মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রায় দেন। এরপর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রকাশ পায় রায়।
এছাড়া জরিমানার টাকা অনাদায়ে হাজী সেলিমকে আদালত আরও এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন এবং রায় পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে তাকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
আত্মসমর্পণ না করলে জামিন বাতিল করে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ রয়েছে। এছাড়া জব্দ করা হাজী সেলিমের সম্পত্তি রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করতে বলা হয়।
জরুরি অবস্থার সময় ২০০৭ সালের ২৪ অক্টোবর হাজী সেলিমের বিরুদ্ধে লালবাগ থানায় অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে মামলা করে দুদক।
এরপর ২০০৮ সালের ২৭ এপ্রিল হাজী সেলিমকে ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত।
২০০৯ সালের ২৫ অক্টোবর হাজী সেলিম রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন। ২০১১ সালের ২ জানুয়ারি হাইকোর্ট ১৩ বছরের সাজা বাতিল করে রায় দেন।
এরপর হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করে দুদক। শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারি হাইকোর্টের ওই রায়
বাতিল করেন আপিল বিভাগ। সেই সঙ্গে হাজী সেলিমের আপিল পুনরায় হাইকোর্টে শুনানির নির্দেশ দেওয়া হয়।
এরপর শুনানি শেষে চূড়ান্ত রায় দেন হাইকোর্ট। সেখানে বিচারিক আদালতের দেওয়া ১৩ বছরের কারাদণ্ড কমিয়ে ১০ বছর বহাল থাকে।